• বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

গায়ক প্রতুল মুখার্জীর জীবনাবসান

গায়ক প্রতুল মুখার্জীর জীবনাবসান

  আন্দোলন প্রতিবেদন  

রবিবার, ১১ মে ২০২৫  |  অনলাইন সংস্করণ

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি’২৫ ভারতের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী প্রতুল মুখার্জী মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি ১৯৪২ সালে ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ’৪৭ এ ভারত-বর্ষ ভাগের পর তিনি পিতা-মাতার সাথে পশ্চিবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়া জেলায় বেড়ে ওঠেন। তিনি ১২ বছর বয়সেই একটি কবিতা সুর দিয়েছিলেন। শিক্ষাজীবন শেষে কিছুদিন একটি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন, পরে ব্যাংকে চাকরি করতেন। কিন্তু তিনি দুই বাংলায় পরিচিত হয়ে উঠেন গণসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে। 

ভারতে শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে নকশালবাড়ি ছিল একটা গুণগত উল্লম্ফন। নকশালবাড়িই প্রথম ডাক দিয়েছিল শিল্পী-সাহিত্যিকদের কৃষক-শ্রমিকের সাথে একাত্ম হতে। নকশালবাড়ির ডাকে বহু কবি-সাহিত্যিক-থিয়েটারকর্মী-গায়ক আত্মপ্রতিষ্ঠার মোহ ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই শহিদ হয়েছেন, কেউ গ্রেফতার হয়ে জেলে কাটিয়েছেন। কমরেড সরোজ দত্ত, কমরেড দ্রোণাচার্য্য ঘোষ, কমরেড চেরাবান্দা রাজু, কমরেড প্রবীর দত্তÑ এঁরা সেইসব উজ্জ্বল নক্ষত্রের  কয়েকজন। প্রতুল মুখার্জীকে তাঁদের দলে ফেলা যায় না। কিন্তু প্রতুল মুখার্জীর গান এবং কথা হচ্ছে নকশালবাড়িরই ফসল। শুরুর দিকে তাঁর গানে কৃষি-বিপ্লবের প্রতি সমর্থন ছিল।  

প্রতুল মুখার্জীও নকশালবাড়ির আন্দোলনের পরে কিছু অনবদ্য গান লিখেছিলেন। সে গানের অনুপ্রেরণায় একসময় কলকাতার ছাত্র-যুবরা পুলিশের রাইফেলের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াত। আন্তর্জাতিক মহাবির্তক এবং চীনের মহান সর্বহারার সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর প্রতুল মুখোপাধ্যায় মাও-এর ছোট ছোট উদ্ধৃতিগুলি গানে গানে জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। 

সহজভাবে রাজনীতি-মতাদর্শকে উপস্থাপনা হচ্ছে প্রতুল মুখার্জির গানের এক অনন্য বৈশিষ্ট। কোনোরকম বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই তিনি শুধু গলা এবং গোটা শরীর দিয়েই গাইতেন। তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল বিভিন্ন বাংলা কবিতায় সুর দেওয়া।  

একটা সময় পর্যন্ত  শ্রমিক-কৃষকের আন্দোলনের পাশেও তাঁকে সংহতিতে পাওয়া যেত। তাঁর গানে বিপ্লবী সারমর্ম ছিল। কিন্তু রূপ-রীতি-আঙ্গিকের সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁর গান মেহনতি জনগণকে স্পর্শ করতে পারেননি। সুতরাং স্বভাবতই তিনি ছিলেন মুষ্টিমেয় পেটিবুর্জোয়া একটা অংশের গায়ক। তিনি তাঁর গানে মধ্যবিত্তের গন্ডি অতিক্রম করতে পারেনি। তাই শেষ পর্যন্ত তিনি হয়ে গেলেন সেই শ্রেণির গায়ক যাদের বিরুদ্ধে তিনি সারাজীবন সংগীত চর্চা করেছেন।  

তিনি গান গেয়েছেন মেহনতি মানুষের, কিন্তু তাঁর শ্রোতারা ছিলেন মধ্যবিত্ত পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণি। তাঁর শ্রেণিগত অবস্থানের কারণেই নিজ শ্রেণির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারেন নি। মধ্যবিত্ত দোদুল্যমানতায় শেষ পর্যন্ত তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। একজন বিপ্লবীর অধঃপতনের পেছনে থাকে তাঁর শ্রেণি অবস্থান। বিশেষ করে সর্বহারা শ্রেণির পক্ষে দাঁড়াতে গেলে তাঁকে শ্রেণিচ্যুত হতে হয়। প্রতুল মুখার্জী তাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই তাঁর শেষ বিদায় হয়েছে ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার রক্ষক পুলিশের স্যালুট ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়।   

প্রতুল মুখার্জীর বিপ্লবী গানগুলোকে জনগণ অবশ্যই মনে রাখবে। আন্দোলনের মাঠ থেকে উঠে আসা গান। তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে বিজয় অবধি লড়াই জারি থাকবে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের বিপ্লবী শিল্পী-সাহিত্যিকদের তাঁর শেষ পরিণতি থেকেও শিক্ষা নিতে নিবে। 

গায়ক প্রতুল মুখার্জীর জীবনাবসান

 আন্দোলন প্রতিবেদন 
রবিবার, ১১ মে ২০২৫  |  অনলাইন সংস্করণ

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি’২৫ ভারতের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী প্রতুল মুখার্জী মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি ১৯৪২ সালে ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ’৪৭ এ ভারত-বর্ষ ভাগের পর তিনি পিতা-মাতার সাথে পশ্চিবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়া জেলায় বেড়ে ওঠেন। তিনি ১২ বছর বয়সেই একটি কবিতা সুর দিয়েছিলেন। শিক্ষাজীবন শেষে কিছুদিন একটি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন, পরে ব্যাংকে চাকরি করতেন। কিন্তু তিনি দুই বাংলায় পরিচিত হয়ে উঠেন গণসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে। 

ভারতে শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে নকশালবাড়ি ছিল একটা গুণগত উল্লম্ফন। নকশালবাড়িই প্রথম ডাক দিয়েছিল শিল্পী-সাহিত্যিকদের কৃষক-শ্রমিকের সাথে একাত্ম হতে। নকশালবাড়ির ডাকে বহু কবি-সাহিত্যিক-থিয়েটারকর্মী-গায়ক আত্মপ্রতিষ্ঠার মোহ ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই শহিদ হয়েছেন, কেউ গ্রেফতার হয়ে জেলে কাটিয়েছেন। কমরেড সরোজ দত্ত, কমরেড দ্রোণাচার্য্য ঘোষ, কমরেড চেরাবান্দা রাজু, কমরেড প্রবীর দত্তÑ এঁরা সেইসব উজ্জ্বল নক্ষত্রের  কয়েকজন। প্রতুল মুখার্জীকে তাঁদের দলে ফেলা যায় না। কিন্তু প্রতুল মুখার্জীর গান এবং কথা হচ্ছে নকশালবাড়িরই ফসল। শুরুর দিকে তাঁর গানে কৃষি-বিপ্লবের প্রতি সমর্থন ছিল।  

প্রতুল মুখার্জীও নকশালবাড়ির আন্দোলনের পরে কিছু অনবদ্য গান লিখেছিলেন। সে গানের অনুপ্রেরণায় একসময় কলকাতার ছাত্র-যুবরা পুলিশের রাইফেলের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াত। আন্তর্জাতিক মহাবির্তক এবং চীনের মহান সর্বহারার সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর প্রতুল মুখোপাধ্যায় মাও-এর ছোট ছোট উদ্ধৃতিগুলি গানে গানে জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। 

সহজভাবে রাজনীতি-মতাদর্শকে উপস্থাপনা হচ্ছে প্রতুল মুখার্জির গানের এক অনন্য বৈশিষ্ট। কোনোরকম বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই তিনি শুধু গলা এবং গোটা শরীর দিয়েই গাইতেন। তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল বিভিন্ন বাংলা কবিতায় সুর দেওয়া।  

একটা সময় পর্যন্ত  শ্রমিক-কৃষকের আন্দোলনের পাশেও তাঁকে সংহতিতে পাওয়া যেত। তাঁর গানে বিপ্লবী সারমর্ম ছিল। কিন্তু রূপ-রীতি-আঙ্গিকের সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁর গান মেহনতি জনগণকে স্পর্শ করতে পারেননি। সুতরাং স্বভাবতই তিনি ছিলেন মুষ্টিমেয় পেটিবুর্জোয়া একটা অংশের গায়ক। তিনি তাঁর গানে মধ্যবিত্তের গন্ডি অতিক্রম করতে পারেনি। তাই শেষ পর্যন্ত তিনি হয়ে গেলেন সেই শ্রেণির গায়ক যাদের বিরুদ্ধে তিনি সারাজীবন সংগীত চর্চা করেছেন।  

তিনি গান গেয়েছেন মেহনতি মানুষের, কিন্তু তাঁর শ্রোতারা ছিলেন মধ্যবিত্ত পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণি। তাঁর শ্রেণিগত অবস্থানের কারণেই নিজ শ্রেণির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারেন নি। মধ্যবিত্ত দোদুল্যমানতায় শেষ পর্যন্ত তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। একজন বিপ্লবীর অধঃপতনের পেছনে থাকে তাঁর শ্রেণি অবস্থান। বিশেষ করে সর্বহারা শ্রেণির পক্ষে দাঁড়াতে গেলে তাঁকে শ্রেণিচ্যুত হতে হয়। প্রতুল মুখার্জী তাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাই তাঁর শেষ বিদায় হয়েছে ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার রক্ষক পুলিশের স্যালুট ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়।   

প্রতুল মুখার্জীর বিপ্লবী গানগুলোকে জনগণ অবশ্যই মনে রাখবে। আন্দোলনের মাঠ থেকে উঠে আসা গান। তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে বিজয় অবধি লড়াই জারি থাকবে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের বিপ্লবী শিল্পী-সাহিত্যিকদের তাঁর শেষ পরিণতি থেকেও শিক্ষা নিতে নিবে। 

আরও খবর
 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র